তিনি সবসময় ফেইসবুকময় লাইভ করে থাকেন। তিনি মদন মিত্র ,তিনি কামারহাটির বিধায়ক ও। তবে আজ তিনি নয়। তার পুত্র বধূর ফেইসবুক লাইভ ঘিরে অস্বস্তি বাড়ছে। সোশাল মিডিয়ায় ভিডিও আপলোড করেছেন বিস্ফোরক মদন মিত্রের পুত্রবধূ স্বাতী রায়। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কামারহাটির তৃণমূল বিধায়কের বড় ছেলে স্বরূপের বিরুদ্ধে মারধর ও অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছেন স্বাতী। তাঁর দাবি, মিত্র পরিবারের অত্যাচারের জেরেই তিনি একবস্ত্রে শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেই নিস্তার মেলেনি। বিচারের দাবি জানালেই নাকি মদন মিত্র ও তাঁর বড় ছেলে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেন।
আমি স্বাতী রায়। ২০১৪-তে আমার হেভিওয়েট মন্ত্রীর বাড়িতে তাঁর বড় ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়েটা ডিসেম্বরে ঠিক হয়, মার্চের মধ্যে হয়ে যায়। বিয়ের পরেই চেনা মানুষটা সম্পূর্ণ বদলে যায়। তারপর দেখতে পাই সে একটি সাইকোপ্যাথ। ঘুমের ওষুধ খায়। মুঠো মুখো ঘুমের ওষুধ খায়, সঙ্গে মদ্যপানও করে। এরপর আমার গায়ে হাত তুলতে শুরু করল। অকথ্য ভাষায় গালাগালাজ করত। আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি প্রচণ্ড চেষ্টা করেছে মারের হাত থেকে বাঁচানোর। কিন্তু আমি বলতাম আমার বিচার। এটা বন্ধ হবে কবে? এটাতো বন্ধ হচ্ছে না। তোমরা বাঁচাচ্ছো, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু সেটা বন্ধ হচ্ছে না তো প্রতিবার মার খাচ্ছি, ব্যথা হচ্ছে। সেই যন্ত্রণা ভরার আগেই আবার মার খেয়ে যন্ত্রণা হচ্ছে। এই যন্ত্রণার বিচার আমি কোনও দিন পাইনি। এরপর ২০১৯-এ আমি কোনও মতে সুযোগ পেলাম, ওদেরই দয়াতে আমার মায়ের কাছে থেকে যাওয়ার। আমি এক কাপড়ে ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমার না ফেরারর সুযোগটা করে দেয়। আমায় ফিরতে বারন করা হয় এবং আমাকে হুমকি দিয়ে বলা হয় যে, আমি যদি ফিরি তাহলে আমাকে মারধর করা হবে।’

এ দিন ফেসবুকে একের পর এক অভিযোগ তুলেছেন স্বাতী। তার সংযোজন, ‘এরপর তাঁরা আসে আমার বাড়িতে। তাঁর ছেলে আসে, তারপর সে নিজে আসে। সে নিজে এসে সেই সময় যাচ্ছেতাই হুমকি দিয়ে যায়। আমার মাকে যাচ্ছেতাই হুমকি দিয়ে যায়। আমরা বাধ্য হই বাড়ি বদলে দিদির বাড়িতে থাকতে। দিদির শ্বশুর বাড়িতে ওদের ভয়ে ৩ মাস কাটাই। বাড়ি থেকে ৩ মাস ভয়ে বেরতে পারিনি। আমাকে যা যা কথা শুনতে হয়েছিল আমি ট্রমাতে ছিলাম। তারপর আড়াই বছর সেপারেশনেও আমি ওর থেকে মার খেয়েছি, আইটিসি হোটেলে মার খেয়েছি, আমি পোর্টিস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম তার নথিও আছে। আমার কাছে সব ডকুমেন্টস, রেকর্ডিংস, সব ফটো আছে।’

সোশাল মিডিয়াতেই স্বাতী জানিয়েছেন, তাঁর একটা কথাও কারোর মিথ্যা মনে হলে সেই ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন তাঁর কাছে নিজের অভিযোগের পক্ষে সব নথি রয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বাতী।

চাপের কাছে আত্মহননের পথ বেছে নিতে গিয়েছিলেন মদন মিত্রর পুত্রবধূ। দাবি করেছেন স্বাতী রায়। তিনি বলেছেন, ‘আমি একটা কথা বলে যেতে ছাই, এদের চাপে আমি একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পরে উপলোবদ্ধি হয় যে আমার একতটা ছোট্ট বাচ্চা রয়েছে। ওর আমাকে দরকার। আণি যেখানেই থাকি আমি আছি, এবং ওর জন্য আমাকে বাঁচতে হবে। তাই আমি লড়াই চালিয়ে যাব বলে ফিরে এসেছি। তাই বোধহয় আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি এই লড়াইটা লড়তে চাই।’

স্বাতী রায়ের আকুতি, ‘আমি বাঁচতে চাই। আমার বাঁচাটা আপনাদের হাতে। আমার উপর হয়তো এরপর আইনি মামলা হবে। তবে এরকম যেন না হয় যে আমি যে অন্যায় করি তার জন্য আমাকে শাস্তি পেতে হচ্ছে। আমি শুধু বাঁচতে চাই। বাঁচতে চাওয়াটা অন্যায় নয়।’

ভিডিওর শেষ পর্বে প্রাণনাশের আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন স্বাতী। তিনি বলেছেন, ‘আমার ভয় হচ্ছে যে এরপর হয়তো আমাকে জিআরপি দিয়ে পরের স্টেশনেই নামিয়ে দেব। এবং আমাকে মেরে ফেলবে। আমি মরতে চাই না। আমার পরিবারের সকলকে ডেকে ডেকে হুমকি দওয়া হচ্ছে। প্লিজ আমাকে বাঁচিয়ে দিন।’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published.