Father' Day-Image Bengal

জুন মাসের তৃতীয় রবিবার ফাদার্স ডে। একটা গোটা দিন কেবলমাত্র বাবাদের জন্য। বিশ্বের প্রায় ৮৭টি দেশে এই দিনটি পালিত হয় সব বয়সের বাবাদের মনে রেখে। ভালবাসায়, শ্রদ্ধায়, আবেগে। কিন্তু ঠিক কবে থেকে আর কোথায় শুরু হল ফাদার্স ডে উদযাপন? কে ছিলেন এর নেপথ্যে? বিশ্বের অন্য দেশগুলিই বা কোন তারিখ বরাদ্দ রেখেছে বাবাদের জন্য? প্রাচীন ইতিহাসে কি বাবাদের জন্য এমন কোনও দিন ছিল? আসুন, দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।

 

জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে পিতৃ-দিবস হিসাবে উদযাপনের সূচনা মার্কিন মুলুকে। এর নেপথ্যে রয়েছে একাধিক গল্প। সবচেয়ে জনপ্রিয় মত হল, ১৯১০ সালে ওয়াশিংটনে প্রথম পালিত হয় ফাদার্স ডে। জুন মাসের ১৯ তারিখে। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সোনোরা স্মার্ট ডড নামে এক মহিলার নাম। সোনোরা খুব কম বয়সে মাতৃহারা হন। তাঁর বাবা ছিলেন সৈনিক। খুব কষ্ট করে ওই বিপত্নীক মানুষটি সোনোরা আর তাঁর ভাইবোনদের বড় করেছিলেন। এহেন বাবাকে সম্মান জানাতে সোনোরা ঠিক করলেন, রীতিমতো জাঁকজমক করে ফাদার্স ডে পালন করতে হবে। তিনি গির্জা এবং স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন। মূলত তাঁর উদ্যোগেই প্রথম পালিত হল ‘বাবা-দিবস’। সোনোরার ইচ্ছে ছিল ৫ জুন তারিখে ফাদার্স ডে পালিত হোক। সেই দিনটিই ছিল তাঁর বাবার জন্মদিন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা পালিত হয় জুন মাসের ১৯ তারিখে।

 

সোনোরার আগেও কিন্তু আমেরিকায় ফাদার্স ডে পালিত হয়েছে বলে জানা যায়। ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় পালিত হয় বাবা দিবস। সোনোরা অবশ্য দাবি করেছিলেন, ভার্জিনিয়ার বিষয়টি তিনি এক্কেবারেই জানতেন না। সে যাই হোক, সোনোরা আর তাঁর সঙ্গীরা ফাদার্স ডে-র সরকারি স্বীকৃতির জন্য দশকের পর দশক প্রচার করে গিয়েছেন। ১৯১৩ সালে মার্কিন সংসদে ফাদার্স ডে-কে ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করা সংক্রান্ত একটি বিল আসে। কিন্তু সেটি শেষ পর্যন্ত দিনের আলো দেখেনি৷ ১৯২৪ সালে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ক্যালভিন কুলিজ ফাদার্স ডে উদযাপনের দাবির প্রতি ব্যক্তিগত সংহতি জানান।

 

অবশেষে, বহু দশকের চেষ্টার পরে, ১৯৬৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন ফাদার্স ডে-কে ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করেন। ১৯৭০ সালে মার্কিন কংগ্রেস রীতিমতো সরকারি নির্দেশ জারি করে জানায়, প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার ফাদার্স ডে পালিত হবে। ওইদিন সবকটি সরকারি দফতরে উড়বে মার্কিন পতাকা, আয়োজন করা হবে বিবিধ অনুষ্ঠানের। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের জমানায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পিতৃদিবস উদযাপন শুরু হয়।

 

এ তো গেল মার্কিন মুলুকের কথা। আরও অনেকগুলি দেশ জুন মাসের তৃতীয় রবিবার ফাদার্স ডে উদযাপন করে। এর মধ্যে আছে ভারত, গ্রেট ব্রিটেন, জাপান, চিলি, মায়ানমার, পাকিস্তান, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভিয়েতনাম, ভেনেজুয়েলা, প্রভৃতি। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফাদার্স ডে উদযাপনের দিনক্ষণ মোটেই এক নয়। কোন দেশে কবে পালিত হয় পিতৃদিবস, একবার দেখে নেওয়া যাক।

 

অস্ট্রিয়া, ইকুয়েডর, বেলজিয়ামে পিতৃদিবস হিসাবে পালিত হয় জুন মাসের দ্বিতীয় রবিবার।

অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে সেপ্টেম্বরের প্রথম রবিবারটি ফাদার্স ডে হিসাবে পালিত হয়।

থাইল্যান্ডে প্রতি বছর ৫ ডিসেম্বর ফাদার্স ডে পালন করা হয়। ওই দিনটি দেশটির রাজা ভূমিবলের জন্মদিন।

ইরানে ফাদার্স ডে পালিত হয় ১৪ মার্চ। পর্তুগাল, স্পেন, ইটালিতে ১৯ মার্চ তারিখটি বাবা-দিবস হিসাবে পালন করা হয়।

সেন্ট হোয়াকিমের সম্মানে ব্রাজিলে অগাস্ট মাসের দ্বিতীয় রবিবার পালিত হয় পিতৃদিবস।

প্রসঙ্গত, ফাদার্স ডে-র প্রতীকী ফুল হলো গোলাপ। যে বাবারা জীবিত, তাঁদের জন্য লাল গোলাপ এবং প্রয়াত বাবাদের জন্য বরাদ্দ সাদা গোলাপ।

 

ফাদার্স ডে-র উল্লেখ রয়েছে ইতিহাসের ধূসর পৃষ্ঠাতেও। মধ্যযুগে, ক্যাথলিক ইউরোপে ফাদার্স ডে পালিত হত। ‘নিউট্রিটর ডোমিনি’ বা ‘নারিশর অফ দ্য লর্ড’ বলা হত সেন্ট জোসেফকে। তাঁরই সম্মানে পালিত হতো ফাদার্স ডে। ক্যাথলিক বিশ্বাসে জোসেফ হলেন যীশু খ্রিস্টের পিতা। রাজা হেরডের অত্যাচার থেকে বাঁচতে অন্তঃসত্ত্বা মাতা মেরীকে নিয়ে জেরুজালেমে চলে যান তিনি। সেখানেই জন্ম নেন যীশু। তাই জোসেফকে ‘নারিশর অফ দ্য লর্ড’ বলা হয়।

এরপর স্প্যানিশ ও পর্তুগীজরা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় উপনিবেশ স্থাপন করলে তাঁদের হাত ধরে সেখানেও ফাদার্স ডে প্রচলিত হয়। তবে এসব পুরনো আমলের কথা। বিশ্বজুড়ে এখন ফাদার্স ডে বলতে জুনের তৃতীয় রবিবারকেই বোঝানো হয়। এই বছর সেই দিনটি প্রায় এসেই গেল।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published.