বিজেপির নবান্ন অভিযান কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে কলকাতা ও হাওড়া। বেলা গড়ানোর সাথে সাথে বিজেপির মিছিল আটকাতে সক্রিয় হয়ে ওঠে পুলিশ। কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পুলিসের সাথে কার্যত খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের। এই খবর আসতেই ঝাড়গ্রাম সফর থেকে সোজা নবান্নে ফেরেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছুক্ষণ নবান্নে থাকার পর ভবানীভবনে যান মুখ্যমন্ত্রী। এ নিয়ে কথা বলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রর সঙ্গে। পাশাপাশি বিজেপির নবান্ন অভিযান নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বিজেপিকে ‘সন্ত্রাসবাদীর দল’ বলে তোপ দাগেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ফিরহাদ হাকিম জানান- “বিজেপি রাজনৈতিক দল নয়, সন্ত্রাসবাদীদের দল। বাংলার শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে। এসব এখানে হবে না। অশান্তি আটকাতে যা যা করার, পুলিশকে বলেছি, সবরকম ব্যবস্থা নিতে। রাজনৈতিক দলের মিছিলে কখনও অস্ত্র থাকে না, স্লোগান থাকে, পোস্টার-ফেস্টুন থাকে।”
বিজেপির নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল কলকাতা ও হাওড়া। পুলিসের পক্ষ থেকে বাঁধা দেওয়া হয় মিছিলে। তারপর পুলিসের সাথে বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পরে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে পুলিশকে লক্ষ করে ইটবৃষ্টি করা হয় বলে অভিযোগ। আহত হন বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী। হেস্টিংস মোড়ে বসে পড়েন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, লকেট চট্টোপাধ্যায় সহ বিজেপির নেতানেত্রীরা।
ওদিকে প্রায় রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় হাওড়ার সাঁতরাগাছি ও হাওড়া ময়দান অঞ্চল। সাঁতরাগাছি থেকে বিজেপির যুব মোর্চার মিছিল নবান্নের দিকে যাত্রা শুরু করে। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন সায়ন্তন বসু ও রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্যারিকেডের সামনে মিছিল এলে ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান চালায় পুলিশ। জলের তোড়ে নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে যান বিজেপি নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিসের তরফ থেকে এরপর ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল। আহত হন বেশ কয়েকজন কর্মী-সমর্থক। বিজেপি নেতাদের অভিযোগ জলকামানে রাসায়নিক মেশানো হয়েছে। অসুস্থ রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাইপাসের ধারে অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিজেপির আরও অভিযোগ, জলকামানে রাসায়নিক ও রঙ মিশ্রিত জলের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন- ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ বর্বরোচিত হামলা চালাল। আমরা হিংসার জবাব হিংসায় দিতে পারতাম।’ নবান্ন বন্ধ রাখার প্রসঙ্গে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন- “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে ভয়ে পেয়েছেন। তি্নি বুঝতেই পেরেছেন ২০২১-এ তৃণমূল আর সরকারে থাকবে না, তাই নবান্নে ছুটি ঘোষণা করেছেন।” লকেট আরও বলেন, আগামী ছয় মাস নবান্নে স্যানিটাইজেসন চলবে, ছয় মাস পর বিজেপি নতুন করে সরকার গড়বে।
গড়িয়ামুখী ইএম বাইপাসের শেষে ঢালাই ব্রিজে বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভের জেরে বাইপাসজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। গড়িয়া ঢালাই ব্রিজের কাছে বিজেপির মিছিল আটকায় পুলিশ। প্রতিবাদে রাস্তায় বসে পড়েন বিজেপি কর্মীরা। পথ অবরোধ করা হয়। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় বিজেপি কর্মীদের।
Leave a Reply